রটন্তী কালী পূজার ইতিহাস || রাধা-কৃষ্ণের প্রেমকাহিনী এবং রটন্তী
রটন্তী কালী পূজার ইতিহাস || রাধা-কৃষ্ণের প্রেমকাহিনী এবং রটন্তী
রটন্তী কালী পূজার ইতিহাস: এক রহস্যময় অতীত
রটন্তী কালী পূজা বাংলার একটি বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠান, যা দক্ষিণেশ্বরের কালী মন্দিরে ব্যাপকভাবে পালিত হয়। এই পুজোর নিজস্ব এক রহস্যময় ইতিহাস রয়েছে, যা রাধা-কৃষ্ণের প্রেমকাহিনী থেকে শুরু করে দেবীর অসাধারণ শক্তির প্রদর্শনের ঘটনা পর্যন্ত বিস্তৃত।
রাধা-কৃষ্ণের প্রেমকাহিনী এবং রটন্তী:
- রটনা: "রটন্তী" শব্দের অর্থ "রটে যাওয়া"। পুরাণ অনুসারে, শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে শ্রীরাধার প্রণয়ের কথা জটিলা-কুটিলা নামে এক নারী রটনা করেছিল।
- আয়ান ঘোষের সন্দেহ: রাধার স্বামী আয়ান ঘোষ এই রটনাকে প্রথমে বিশ্বাস করেননি। কিন্তু পরে মাঘ মাসের এক গভীর রাতে তিনি রাধাকে গোপনে কৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় ধরে ফেলেন।
- রাধার সত্যি স্বরূপ: এই ঘটনার মাধ্যমে আয়ান ঘোষ বুঝতে পারেন যে রাধা আসলে আদ্যাশক্তির অবতার।
- রটন্তী কালী পূজার উদ্ভব: এই ঘটনাকে স্মরণ করেই বিশেষ এই তিথিতে রটন্তী কালী পূজা পালিত হয়ে আসছে।
দক্ষিণেশ্বরের রটন্তী কালী পূজা:
- বিশেষ তিথি: এই পূজা সাধারণত চতুর্দশী তিথিতে পালিত হয়, অমাবস্যা নয়।
- দক্ষিণেশ্বরের গুরুত্ব: দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে এই পূজা খুব ধুমধাম করে পালিত হয়।
- পুণ্যার্থীদের আগমন: এই দিনে দক্ষিণেশ্বরে প্রচুর ভক্তসমাগম হয়। অনেকেই গঙ্গায় স্নান করতে আসেন।
রটন্তী কালী পূজার মাহাত্ম্য:
- দেবীর ক্ষমতা: এই পূজার মাধ্যমে দেবীর অসীম শক্তির প্রদর্শন হয়।
- পাপমোচন: এই পূজায় অংশগ্রহণ করলে পাপমোচন হয় এবং মন শান্ত হয়।
- আধ্যাত্মিক উন্নতি: এই পূজা আধ্যাত্মিক উন্নতির পথ প্রশস্ত করে।
সারসংক্ষেপ:
রটন্তী কালী পূজা বাংলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এর ইতিহাস রাধা-কৃষ্ণের প্রেমকাহিনী এবং দেবীর অসাধারণ শক্তির প্রদর্শনের সাথে জড়িত। এই পূজা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি একই সাথে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।
রটন্তী কালীপুজো: একটি পৌরাণিক গল্প
রটন্তী কালীপুজো একটি বিশেষ ধরনের কালী পূজা, যা সাধারণত মাঘ মাসের কৃষ্ণ চতুর্দশী তিথিতে পালিত হয়। এই পূজার পিছনে একটি রোমাঞ্চকর পৌরাণিক কাহিনী লুকিয়ে আছে।
কাহিনীর সূত্রপাত
কথিত আছে, শ্রীকৃষ্ণের বাঁশিধ্বনি শুনে শ্রীরাধা নিজেকে আর সামলাতে পারতেন না। তিনি বাড়ি ছাড়া কৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করতে চলে যেতেন। এই ঘটনা তার স্বামী আয়ান ঘোষকে অজানা ছিল না। কিন্তু তিনি একবারও শ্রীরাধার কথা বিশ্বাস করতেন না।
একদিন মাঘ মাসের কৃষ্ণ চতুর্দশীর অন্ধকার রাতে, শ্রীরাধা আবারও কৃষ্ণের বাঁশিধ্বনি শুনে তাঁর কাছে চলে যান। এইবার শ্রীরাধার ননদ জটিলা কুটিলা তাঁকে হাতেনাতে ধরে এবং আয়ান ঘোষকে সব কথা বলে। আয়ান ঘোষও শ্রীরাধাকে কুঞ্জবনে নিয়ে যান।
ঠিক সেই সময় শ্রীকৃষ্ণ তাঁর আরাধ্য দেবী মহাকালীকে প্রার্থনা করেন। মহাকালী প্রকাশ হয়ে শ্রীরাধাকে আশ্বস্ত করেন। আয়ান ঘোষ যখন সেখানে আসেন, তিনি দেখেন মহাকালী গাছের তলায় বসে আছেন এবং শ্রীরাধা তাঁর চরণ সেবা করছেন। এই দৃশ্য দেখে আয়ান ঘোষ মহাকালীর উপাসক হয়ে ওঠেন।
রটন্তী কালীপুজোর উৎপত্তি
এই ঘটনার পর থেকে এই দিনটিতে মহাকালীর পূজা করা হয়। যেহেতু এই ঘটনা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে, তাই এই পূজার নাম হয় 'রটন্তী কালীপুজো'। 'রটন্তী' শব্দের অর্থ হল 'রটে যাওয়া'।
কেন এই পূজা বিশেষ?
- শাক্ত ও বৈষ্ণব সংযোগ: এই পূজায় শাক্ত ও বৈষ্ণব ধর্মের মেলবন্ধন ঘটে।
- শিবরাত্রির সঙ্গে যোগ: মাঘ মাসের কৃষ্ণ চতুর্দশীতে শিবরাত্রিও পালিত হয়। তাই এই দিনটি শিব ও কালী উভয়ের পূজার দিন।
- দক্ষিণেশ্বরের বিশেষত্ব: দক্ষিণেশ্বরের কালী মন্দিরে এই পূজা বিশেষভাবে পালিত হয়।
সারসংক্ষেপে
রটন্তী কালীপুজো শুধু একটি পূজা নয়, এটি একটি পৌরাণিক কাহিনী, একটি সংস্কৃতি এবং একটি বিশ্বাসের প্রতীক। এই পূজা শাক্ত ও বৈষ্ণব ধর্মের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন স্থাপন করেছে।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url