দীর্ঘদিন ধরে কাশির সমস্যা কিসের লক্ষণ | ক্রমাগত শুকনো কাশি কোন রোগের লক্ষণ

 

অতিরিক্ত কাশি হলে কি করতে হবে

দীর্ঘস্থায়ী বা অতিরিক্ত কাশি বিভিন্ন অন্তর্নিহিত চিকিৎসা অবস্থার লক্ষণ হতে পারে। তাই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ।

তবে, কিছু ঘরোয়া প্রতিকার আছে যা আপনার কাশি উপশম করতে সাহায্য করতে পারে:

১. প্রচুর পরিমাণে তরল পান করুন: এটি শ্লেষ্মা পাতলা করতে এবং শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করবে। পানি, জুস, clear broth, স্যুপ ইত্যাদি বেশি বেশি পান করুন।

২. লবণাক্ত জল দিয়ে নাকে ফ্ল্যাশ করুন: এটি জমা শ্লেষ্মা পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে।

৩. আর্দ্রতা বাষ্প নিন: এটি শ্বাসনালীর শ্লেষ্মা ঝিল্লিকে শিথিল করতে এবং কাশি উপশম করতে সাহায্য করবে। গরম পানির বাষ্প শ্বাস নিন অথবা humidifier ব্যবহার করুন।

৪. মধু খান: কাশির উপসর্গ কমাতে মধু সাহায্য করতে পারে। এক চা চামচ মধু গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে কয়েকবার খান।

৫. আদা চা পান করুন: আদা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, যা কাশির কারণ হতে পারে। আদা কুঁচি করে গরম পানিতে ফুটিয়ে ছেঁকে দিনে কয়েকবার খান।

৬. লবঙ্গ: লবঙ্গের রস গলায় আরাম দেয় এবং জীবাণুনাশক। লবঙ্গ চিবিয়ে খান অথবা লবঙ্গের রস গরম পানিতে মিশিয়ে গার্গল করুন।

৭. বাসক পাতা: বাসক পাতা কাশি উপশমে কার্যকর। বাসক পাতা সেদ্ধ করে ছেঁকে কুসুম গরম অবস্থায় পান করুন।

৮. তুলসী পাতা: তুলসী পাতা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল গুণাবলী সমৃদ্ধ যা কাশি উপশমে সহায়ক। তুলসী পাতা থেঁতো করে মধু মিশিয়ে দিনে কয়েকবার খান।

মনে রাখবেন:

  • যদি কাশির সাথে জ্বর, তীব্র শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, রক্ত কাশি থাকে তাহলে দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা নিন।
  • এক বছরের কম বয়সী শিশুদের মধু খাওয়ানো উচিত নয়।
  • ধূমপান এড়িয়ে চলুন কারণ এটি কাশির প্রধান কারণগুলির মধ্যে একটি।
  • আপনার ঘর পরিষ্কার রাখুন এবং ধুলোবালি এড়িয়ে চলুন।
  • নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন।

এই তথ্যগুলো কেবলমাত্র তথ্য দানের জন্য। চিকিৎসা সংক্রান্ত কোন পরামর্শের জন্য একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

ক্রমাগত শুকনো কাশি কোন রোগের লক্ষণ

ক্রমাগত শুকনো কাশি বিভিন্ন রোগের লক্ষণ হতে পারে। এর মধ্যে কিছু সাধারণ কারণ হল:

শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ:

  • সর্দি: এটি সবচেয়ে সাধারণ কারণ, সাধারণত ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে হয়। লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে শুকনো কাশি, গলা ব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া এবং কখনও কখনও হালকা জ্বর।
  • ফ্লু: এটি একটি ভাইরাসের সংক্রমণ যা সর্দির চেয়ে বেশি তীব্র হতে পারে। লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে শুকনো কাশি, জ্বর, গলা ব্যথা, পেশী ব্যথা, মাথাব্যথা এবং ক্লান্তি।
  • ব্রঙ্কাইটিস: এটি ব্রঙ্কিয়াল টিউবের প্রদাহ, যা ফুসফুসে শ্বাস-প্রশ্বাসের নলী। লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে শুকনো বা কফযুক্ত কাশি, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট এবং কখনও কখনও জ্বর।

অ্যালার্জি:

  • অ্যালার্জিক রাইনাইটিস: এটি ধুলো, পরাগরেণু বা পোষা প্রাণীর পশমের মতো অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসার ফলে হয়। লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে শুকনো কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখে জ্বালাপোড়া এবং কখনও কখনও হাঁচি।
  • অ্যাজমা: এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা যা শ্বাসনালীর প্রদাহ এবং সংকীর্ণতার কারণ হয়। লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে শক্তি অনুভূত হওয়া এবং হাঁচি, বিশেষ করে রাতে বা শারীরিক কাজের পরে।

অন্যান্য কারণ:

  • গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD): যখন পেটের অম্ল খাদ্যনালীতে ফিরে আসে তখন এটি হতে পারে। লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে শুকনো কাশি, গলা ব্যথা, হৃদপিণ্ডে জ্বালাপোড়া এবং কখনও কখনও বুকে ব্যথা।
  • ধূমপান: ধূমপান শ্বাসনালীকে নষ্ট করে এবং ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস এবং এমফিসেমার মতো দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
  • ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধ, যেমন রক্তচাপের ওষুধ, কাশির কারণ হতে পারে।
  • শুষ্ক বাতাস: শুষ্ক বাতাস শ্বাসনালীর শ্লেষ্মা ঝিল্লিকে বিরক্ত করতে পারে এবং কাশির কারণ হতে পারে।
  • হৃদরোগ: কিছু ক্ষেত্রে, কাশি হৃদরোগের লক্ষণ হতে পারে, বিশেষ করে যদি এটি বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা ফুলে যাওয়ার সাথে থাকে।

এলার্জি কাশির লক্ষণ

এলার্জি কাশির অনেকগুলি লক্ষণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • শুকনো কাশি:এটি সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ, এবং এটি দিনের বেলায় বা রাতে হতে পারে।

  • হাঁচি:এটি প্রায়শই এলার্জি কাশির সাথে হয় এবং ধুলো, পরাগরেণু বা পোষা প্রাণীর পশমের মতো অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসার কারণে হতে পারে।

  • নাঁক দিয়ে পানি পড়া:এটি অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসার ফলে নাকের ঝিল্লীর প্রদাহের কারণে হয়।

  • চোখে জ্বালাপোড়া বা চুলকানি:এটি অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসার ফলে চোখের ঝিল্লীর প্রদাহের কারণে হয়।

  • গলা ব্যথা:এটি অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসার ফলে গলার ঝিল্লীর প্রদাহের কারণে হতে পারে।

  • কানে চুলকানি বা ব্যথা:এটি অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসার ফলে ইউস্টেশিয়ান টিউবের প্রদাহের কারণে হতে পারে।

  • ত্বকের চুলকানি বা ফুসকুড়ি: এটি অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসার ফলে ত্বকের প্রদাহের কারণে হতে পারে।

  • শ্বাসকষ্ট: এটি একটি গুরুতর লক্ষণ যা অ্যাজমা রোগের লক্ষণ হতে পারে। আপনার যদি শ্বাসকষ্ট হয় তবে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সহায়তা নিন।

এলার্জি কাশির লক্ষণগুলি হালকা থেকে তীব্র পর্যন্ত হতে পারে। যদি আপনি মনে করেন যে আপনার এলার্জি কাশি হতে পারে তবে আপনার ডাক্তারের সাথে দেখা করা গুরুত্বপূর্ণ। তারা আপনার লক্ষণগুলির কারণ নির্ণয় করতে এবং আপনার জন্য সঠিক চিকিৎসা পরিকল্পনা সুপারিশ করতে সক্ষম হবেন।

এলার্জি কাশির চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • অ্যান্টিহিস্টামাইন:এগুলি অ্যালার্জির লক্ষণগুলি উপশম করতে সাহায্য করে হিস্টামিনের প্রভাবকে ব্লক করে।

  • ডিকোনজেস্ট্যান্টস: এগুলি নাকের পথ খোলার জন্য সাহায্য করে এবং নাক দিয়ে পানি পড়া উপশম করতে পারে।

  • স্টেরয়েড নেজাল স্প্রে:এগুলি নাকের ঝিল্লীর প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

  • মৌখিক স্টেরয়েড: গুরুতর এলার্জি কাশির ক্ষেত্রে এগুলি ব্যবহার করা

কাশি হলে কি খাওয়া যাবে না

কাশি হলে এড়িয়ে চলা উচিত এমন কিছু খাবার:

১. দুগ্ধজাত খাবার: দুধ, পনির, দই ইত্যাদি দুগ্ধজাত খাবার কাশি বাড়িয়ে দিতে পারে। কারণ, দুগ্ধজাত খাবারে থাকা শ্লেষ্মা কাশির তীব্রতা বৃদ্ধি করতে পারে।

২. ঠান্ডা খাবার: ঠান্ডা পানি, আইসক্রিম, ঠান্ডা শরবত ইত্যাদি ঠান্ডা খাবার গলা ও শ্বাসনালীতে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে কাশি বাড়িয়ে দিতে পারে।

৩. মশলাযুক্ত খাবার: মরিচ, হলুদ, জিরা, লবঙ্গ, এলাচ ইত্যাদি মশলাযুক্ত খাবার গলায় জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে কাশি বাড়িয়ে দিতে পারে।

৪. ভাজাভুজি: তেলতে ভাজা খাবার হজমে কঠিন এবং শ্লেষ্মা বৃদ্ধি করে কাশি বাড়িয়ে দিতে পারে।

৫. চকোলেট: চকোলেটে থাকা থিওব্রোমিন নামক উপাদান কাশির তীব্রতা বাড়িয়ে দিতে পারে।

৬. ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়: কফি, চা, কোলা ইত্যাদি ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি করে কাশি বাড়িয়ে দিতে পারে।

৭. অ্যালকোহল: অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় গলায় জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে কাশি বাড়িয়ে দিতে পারে।

৮. ধূমপান: ধূমপান শ্বাসনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং কাশি বাড়িয়ে দিতে পারে।

মনে রাখবেন:

  • এই তথ্যগুলো কেবলমাত্র তথ্য দানের জন্য। চিকিৎসা সংক্রান্ত কোন পরামর্শের জন্য একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
  • আপনার কাশির সাথে যদি জ্বর, তীব্র শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, রক্ত কাশি থাকে তাহলে দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা নিন।
  • নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন।
  • আপনার ঘর পরিষ্কার রাখুন এবং ধুলোবালি এড়িয়ে চলুন।

কাশি উপশমের জন্য কিছু টিপস:

  • প্রচুর পরিমাণে তরল পান করুন, বিশেষ করে গরম পানি।
  • লবণাক্ত জল দিয়ে নাকে ফ্ল্যাশ করুন।
  • আর্দ্রতা বাষ্প নিন।
  • মধু খান।
  • আদা চা পান করুন।
  • লবঙ্গ চিবিয়ে খান।
  • বাসক পাতা সেদ্ধ করে ছেঁকে পান করুন।
  • তুলসী পাতা মধু মিশিয়ে খান।

এই তথ্যগুলো কেবলমাত্র তথ্য দানের জন্য। চিকিৎসা সংক্রান্ত কোন পরামর্শের জন্য একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

রাতে কাশি কমানোর উপায়

রাতের বেলা কাশি বেশ বিরক্তিকর হতে পারে। ঘুম ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি শারীরিক অস্বস্তিও বাড়িয়ে দিতে পারে।

কাশি কমাতে এবং আরামদায়ক ঘুমের জন্য এখানে কিছু টিপস দেওয়া হল:

পরিবেশ:

  • আর্দ্রতা বাড়ান: শুষ্ক বাতাস কাশির তীব্রতা বাড়িয়ে দিতে পারে। একটি humidifier ব্যবহার করে ঘরের আর্দ্রতা বাড়ান।
  • শোবার ঘর ঠান্ডা রাখুন: খুব গরম ঘরে শোওয়া কাশি বাড়িয়ে দিতে পারে। শোবার ঘরের তাপমাত্রা 18°C (64°F) এর কাছাকাছি রাখুন।
  • ধুলোবালি ও অ্যালার্জেন কমিয়ে দিন: নিয়মিত বিছানার চাদর, বালিশের কভার পরিবর্তন করুন এবং ধুলোবালি পরিষ্কার রাখুন। পোষা প্রাণী থাকলে তাদের শোবার ঘর থেকে দূরে রাখুন।

জীবনধারা:

  • প্রচুর পরিমাণে তরল পান করুন: পানি, গরম স্যুপ, ভেষজ চা ইত্যাদি পান করে শ্লেষ্মা পাতলা করুন এবং শরীর থেকে বের করে দিন।
  • উঁচুতে মাথা রেখে ঘুমান: একটি বা দুটি অতিরিক্ত বালিশ ব্যবহার করে আপনার মাথা উঁচু করে ঘুমানো শ্লেষ্মা জমা হওয়া রোধ করতে সাহায্য করবে।
  • শোবার আগে ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন: শোবার কমপক্ষে 3 ঘন্টা আগে খাবার খাওয়া শেষ করুন।
  • ধূমপান এড়িয়ে চলুন: ধূমপান শ্বাসনালীকে নষ্ট করে এবং কাশি বাড়িয়ে দেয়।
  • ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন: এই পানীয়গুলি মূত্রবর্ধক এবং শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি করতে পারে যা কাশি বাড়িয়ে দিতে পারে।

ঘরোয়া প্রতিকার:

  • লবণাক্ত জল দিয়ে নাকে ফ্ল্যাশ করুন: নাকের জমা শ্লেষ্মা পরিষ্কার করতে লবণাক্ত জল দিয়ে নাকে ফ্ল্যাশ করুন।
  • গরম পানিতে মধু মিশিয়ে খান: মধু গলা ব্যথা উপশম করতে এবং কাশি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  • আদা চা পান করুন: আদা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং কাশি উপশম করতে পারে।
  • লবঙ্গ চিবিয়ে খান: লবঙ্গের রস গলায় আরাম দেয় এবং জীবাণুনাশক।
  • বাসক পাতা সেদ্ধ করে ছেঁকে পান করুন: বাসক পাতা কাশি উপশমে কার্যকর।
  • তুলসী পাতা মধু মিশিয়ে খান: তুলসী পাতা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল গুণাবলী সমৃদ্ধ যা কাশি উপশমে সহায়ক।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url