ফাইব্রয়েড বা ইউটেরাস টিউমারের সমস্যা ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞের মতামত

 


ফাইব্রয়েড বা ইউটেরাস টিউমারের সমস্যা ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞের মতামত

সাধারণত ফাইব্রয়েড বলতে ইউটেরাসের টিউমারকে বোঝায়। জরায়ুর মাংসপেশি থেকে টিউমার হলে তাকে বলে মায়োমা। আবার ফাইব্রয়েডের মধ্যে থাকা টিসু ও মায়োমেডাস টিসুর সংমিশ্রণে যে টিউমার হয়, তাকে বলে ফাইব্রোমায়োমা বা লিয়োমায়োমা। কিন্তু এই প্রতিটি প্রকারই মোটামুটি সমার্থক। শরীরে ইস্ট্রোজেনের প্রভাবে এই টিউমার আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পায়। ফাইব্রয়েড মূলত তিন রকমের।

১. সাবসেরোসাল (ইউটেরাসের বাইরে)
২. মায়োমেট্রিয়াল (মাংসপেশিতে)
৩. সাবমিউকাস (লাইনিংয়ের ভেতরে)

লক্ষণ:

৩০-৩৫ শতাংশ মহিলারই ফাইব্রয়েড থাকে। অনেকক্ষেত্রেই আগে থেকে কোনও লক্ষণ বোঝা যায় না। কোনও সময়ে আলট্রাসাউন্ড করতে এসে হয়ত রোগী জানতে পারলেন তাঁর ফাইব্রয়েড আছে। যদিও এক্ষেত্রে কিছু লক্ষণ থাকে। তার মধ্যে হেভি ব্লিডিং, তলপেটে ব্যথা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। পিরিয়ডের সময় ছাড়া যদি অন্য সময়েও পেটে একটা ভারী অনুভূতি থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রেও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

 অনেকগুলি ফাইব্রয়েড থাকলে বা ফাইব্রয়েড আকারে বড় হলে আরও কিছু আনুষাঙ্গিক উপসর্গ হতে পারে। যেমন বারবার ইউরিনেশনের ইচ্ছা, ইন্টারকোর্সের সময় যন্ত্রণা ইত্যাদি। অনেকের ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়। যদি ইউটেরাসের লাইনিংয়ের মধ্যে ফাইব্রয়েড থাকে, তাহলে হেভি ব্লিডিং ও ইনফার্টিলিটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যদি লাইনিংয়ের বাইরের দিকে ফাইব্রয়েড থাকে, তাহলে কোনও লক্ষণ দেখা যায় না।

চিকিৎসা:

ফাইব্রয়েডটি ইউটেরাসের ঠিক কোন জায়গায় রয়েছে, এবং তার আকার কত বড়, তার উপর নির্ভর করে এর উপসর্গ ও চিকিৎসা। স্বভাবতই ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমিয়ে দেওয়া গেলে টিউমারের বৃদ্ধিও কমিয়ে দেওয়া সম্ভব।

ফলে ৩৫ থেকে ৪০ বছর বয়সি কোনও মহিলার ফাইব্রয়েড ধরা পড়লে চেষ্টা করা হয় তাঁর মেনোপজ় এগিয়ে আনতে। ফাইব্রয়েড চিকিৎসার মূল লক্ষ্যই হল ওষুধের সাহায্যে কৃত্রিম মেনোপজ় তৈরি করা। সাবসেরোসাল ফাইব্রয়েডের ক্ষেত্রে সার্জারি বা ওষুধের সাহায্যে চিকিৎসা করা হয়। আজকাল খুব বড় ফাইব্রয়েডের ক্ষেত্রেও মাইক্রোসার্জারি করা হয়। সার্জারি সম্ভব না হলে ওষুধ বা ইনজেকশনের সাহায্যে টিউমারের আকার ছোট করা যায়। মায়োমেট্রিয়াল ফাইব্রয়েডও ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারির সাহায্যে চিকিৎসাযোগ্য।

সাবমিউকাস ফাইব্রয়েড হয়ে থাকলে সেক্ষেত্রে হিস্টেরোস্কোপির সাহায্য নেওয়া হয়। এরপর একটি বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে সার্জারি করা হয়। ফাইব্রয়েডের সঙ্গে অনেকেই অ্যাডিনোমায়োমাকে গুলিয়ে ফেলেন। এটিও একধরনের ইউটেরাসের টিউমার। এই সার্জারি অপেক্ষাকৃত কঠিন, কারণ এক্ষেত্রে মাসল ফাইবারের সঙ্গে টিউমারটি জড়িয়ে থাকে। তবে ইদানিং একটি নতুন চিকিৎসা জনপ্রিয় হচ্ছে, যার নাম ‘ফাইব্রয়েড এমবোলাইজ়েশন’। একাধিক ফাইব্রয়েড থাকলে, কিংবা রোগীর যদি ডায়াবিটিস সহ অন্যান্য সমস্যা থাকে, তখন এই পদ্ধতি দারুণ কার্যকর।

 বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানেই এই চিকিৎসা করা প্রয়োজন। রোগীর কাউন্সেলিংও করা হয়। এমআরআই গাইডেড লেজ়ার ট্রিটমেন্টের সাহায্যও নেন অনেকে। এর মাধ্যমে লেজ়ার দিয়ে ফাইব্রয়েডকে ভেপোরাইজ় করে দেওয়া হয়। মাঝারি থেকে ছোট ফাইব্রয়েডে লেজ়ার ট্রিটমেন্ট কার্যকর। রিপ্রোডাক্টিভ এজ-এ ফাইব্রয়েড সবচেয়ে বেশি হলেও যে কোনও বয়সেই এটি হতে পারে। ইস্ট্রোজেন লাইনিংয়ে ফাইব্রয়েড থাকলে সন্তানধারণে অসুবিধে হতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url