Winter Spacial: শীতকালে কি কি ফুল ফোটে | শীতকালীন সবজির নামের তালিকা | শীতকালে কি কি উৎসব হয়

শীতকাল ষড়ঋতুর অন্যতম একটি ঋতু। এটি পৌষ ও মাঘ মাসকে নিয়ে গঠিত। শীতকালে প্রকৃতি যেন এক নতুন রূপ ধারণ করে। গাছের পাতা ঝরে পড়ে এবং নতুন পাতা গজাতে শুরু করে। ঘাসের ডগায় শিশির জমে থাকে। সকালে ঘুম থেকে উঠে চারদিকে তাকালে মনে হয় যেন প্রকৃতি কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে।

শীতকালে দিন ছোট এবং রাত বড় হয়। উত্তর দিক থেকে হিমেল বাতাস বইতে থাকে। ফলে শীতের প্রচণ্ডতা আরও বেড়ে যায়। এই সময় ঠান্ডার কারণে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই শীতকালে গরম কাপড় পরা জরুরি।

শীতকালে নানা ধরনের ফল ও সবজি পাওয়া যায়। লালশাক, পালংশাক, বেগুন, বরবটি, শিম, টমেটো, আলু, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মটরশুঁটি, শালগম, ওলকপি ইত্যাদি শীতকালের আকর্ষণীয় ও উপাদেয় সবজি। এ সময় গাঁদা, গোলাপ, ডালিয়া, সূর্যমুখী ইত্যাদি রংবেরঙের ফুলে বাগান ভরে যায়।

শীতকালে বিভিন্ন ধরনের উৎসব পালিত হয়। পৌষ পার্বণ, শীত বৈশাখ, বৈশাখী মেলা ইত্যাদি শীতকালের উল্লেখযোগ্য উৎসব।

শীতকালের কিছু সুবিধা রয়েছে। শীতকালে দিন ছোট এবং রাত বড় হওয়ায় রাতে ঘুমানো সহজ হয়। শীতকালে শরীর ভালো থাকে এবং রোগবালাই কম হয়। এছাড়াও শীতকালে বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি পাওয়া যায় যা শরীরের জন্য উপকারী।

তবে শীতকালের কিছু অসুবিধাও রয়েছে। শীতকালে ঠান্ডা বাতাসের কারণে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। এছাড়াও শীতকালে দিন ছোট হওয়ায় কাজকর্ম করতে অসুবিধা হয়।

সামগ্রিকভাবে বলা যায়, শীতকাল একটি সুন্দর ও উপকারী ঋতু। শীতকালে সঠিকভাবে ঠান্ডা থেকে বাঁচতে পারলে শীতকাল উপভোগ করা যায়।

শীতকালে কি কি ফুল ফোটে

শীতকালে ফোটে এমন ফুলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

  • গাঁদা
  • গোলাপ
  • ডালিয়া
  • সূর্যমুখী
  • কসমস
  • অ্যাস্টার
  • ক্যালেন্ডুলা
  • ফ্লক্স
  • ভারবেনা
  • কারনেশান
  • পপি
  • মর্নিং গ্লোরি
  • সুইট পি
  • অ্যাজালিয়া
  • জারবেরা
  • গ্ল্যাডিওলাস

এছাড়াও আরও অনেক ধরনের ফুল শীতকালে ফোটে। যেমন:

  • চন্দ্রমল্লিকা
  • ন্যাস্টারশিয়াম
  • প্যানজি
  • ডায়ান্থাস
  • হলিহক
  • সিলভিয়া
  • এন্টিরিনাম

শীতকালে ফোটে এমন ফুলের একটি বৈশিষ্ট্য হল, এগুলি সাধারণত শীতের ঠান্ডা আবহাওয়া সহ্য করতে পারে। এছাড়াও, শীতকালে ফোটে এমন ফুলগুলি সাধারণত রঙিন এবং আকর্ষণীয় হয়। ফলে, শীতকালে বাগানগুলি ফুলের সমারোহে ভরে ওঠে।

শীতকালীন সবজির নামের তালিকা

শীতকালীন সবজি হল এমন সবজি যা শীতকালে প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয় এবং খাওয়া হয়। বাংলাদেশে শীতকালীন সবজির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

  • ফুলকপি
  • বাঁধাকপি
  • ওলকপি
  • লালশাক
  • পালংশাক
  • মুলা
  • শালগম
  • শিম
  • টমেটো
  • পেঁয়াজ পাতা
  • লউ
  • ব্রোকলি
  • মটরশুঁটি
  • গাজর
  • ধনিয়াপাতা

এছাড়াও আরও অনেক ধরনের সবজি শীতকালে উৎপাদিত হয়। যেমন:

  • বেগুন
  • বরবটি
  • শসা
  • কুমড়া
  • মিষ্টিকুমড়া
  • কাঁকরোল
  • চিচিঙ্গা
  • ঢেঁড়স
  • কচু

শীতকালীন সবজিগুলি সাধারণত পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু হয়। এগুলিতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন,

খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। তাই শীতকালে প্রচুর পরিমাণে শীতকালীন সবজি খাওয়া উচিত।

শীতকালে কি কি উৎসব হয়

শীতকালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের উৎসব পালিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

পৌষ পার্বণ: পৌষ পার্বণ বা পৌষ সংক্রান্তি বা মকরসংক্রান্তি হল একটি বাঙালি হিন্দু উৎসব। এই উৎসবটি সাধারণত পৌষ মাসের শেষ দিন (বাংলা পঞ্জিকার শেষ দিন) পালিত হয়। এই উৎসবে ঘুড়ি উড়ানো, পিঠা খাওয়া, ঠান্ডা পানিতে গোসল করা ইত্যাদির মাধ্যমে শীতের আগমনকে স্বাগত জানানো হয়।

শীত বৈশাখ: শীত বৈশাখ হল একটি বাঙালি হিন্দু উৎসব। এই উৎসবটি সাধারণত মাঘ মাসের শেষ দিন (বাংলা পঞ্জিকার শেষ দিন) পালিত হয়। এই উৎসবে ঘুড়ি উড়ানো, পিঠা খাওয়া, ঠান্ডা পানিতে গোসল করা ইত্যাদির মাধ্যমে শীতের শেষ এবং বসন্তের আগমনকে স্বাগত জানানো হয়।

বৈশাখী মেলা: বৈশাখী মেলা হল একটি বাঙালি হিন্দু উৎসব। এই মেলা সাধারণত বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে মাঘ মাসের শেষ দিন (বাংলা পঞ্জিকার শেষ দিন) থেকে শুরু হয় এবং বৈশাখ মাসের প্রথম দিন (বাংলা পঞ্জিকার প্রথম দিন) পর্যন্ত চলে। এই মেলায় বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী, খাবার, এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ইউরোপীয় উৎসব: ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শীতকালে বিভিন্ন ধরনের উৎসব পালিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

 ক্রিসমাস: ক্রিসমাস হল খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের একটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসবটি সাধারণত ডিসেম্বর মাসের ২৫ তারিখে পালিত হয়। এই উৎসবে গির্জায় প্রার্থনা করা, গাছ সাজানো, উপহার দেওয়া, এবং ক্রিসমাস ডিনার খাওয়ার মাধ্যমে যীশু খ্রিস্টের জন্মকে উদযাপন করা হয়।

নিউ ইয়ার্স ইভ: নিউ ইয়ার্স ইভ হল একটি আন্তর্জাতিক উৎসব। এই উৎসবটি সাধারণত ডিসেম্বর মাসের ৩১ তারিখে পালিত হয়। এই উৎসবে রাত ১২টার পর নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

 ওল্ড মাইস ডে: ওল্ড মাইস ডে হল একটি জার্মান উৎসব। এই উৎসবটি সাধারণত জানুয়ারি মাসের ৬ তারিখে পালিত হয়। এই উৎসবে বাড়ির দরজায় ওল্ড মাইস (এক ধরনের মুখোশ) রেখে দেওয়া হয়। শিশুরা মনে করে যে, ওল্ড মাইস তাদের জন্য উপহার নিয়ে এসেছে।

চীনা উৎসব: চীনের বিভিন্ন দেশে শীতকালে বিভিন্ন ধরনের উৎসব পালিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

 চীনা নববর্ষ: চীনা নববর্ষ হল চীনের একটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসবটি সাধারণত জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে পালিত হয়। এই উৎসবে ছুটি কাটানো, পরিবারের সাথে সময় কাটানো, নতুন পোশাক পরা, এবং লাল কাগজ ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়।

চীনা নতুন বছরের উৎসব: চীনা নতুন বছরের উৎসব হল চীনের একটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসবটি সাধারণত জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে পালিত হয়। এই উৎসবে ছুটি কাটানো, পরিবারের সাথে সময় কাটানো, নতুন পোশাক পরা, এবং লাল কাগজ ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়।

এই ছাড়াও, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শীতকালে আরও অনেক ধরনের উৎসব পালিত হয়।

ভারতের মধ্যে শীতকালীন বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চল কোনগুলি

ভারতে শীতকালীন বৃষ্টিপাতের প্রধান কারণ হল পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। এই ঝঞ্ঝাগুলি মধ্য-অক্ষাংশে উৎপন্ন হয় এবং ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রবেশ করে। এগুলি সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে ঘটে।

ভারতের শীতকালীন বৃষ্টিপাতের অঞ্চলগুলি হল:

উত্তর-পশ্চিম ভারত: পশ্চিম ঝঞ্ঝাগুলির প্রভাবে এই অঞ্চলে শীতকালে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এই বৃষ্টিপাতের ফলে উত্তর-পশ্চিম ভারতের কৃষি ও শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

হিমালয়: হিমালয়ের উত্তর-পশ্চিম ঢালে পশ্চিম ঝঞ্ঝাগুলির প্রভাবে তুষারপাত হয়। এই তুষারপাতের ফলে হিমালয়ের জলবিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

পূর্ব উপকূল: পূর্ব উপকূলে শীতকালে লঘু বৃষ্টিপাত হয়। এই বৃষ্টিপাতের ফলে পূর্ব উপকূলের কৃষি ও শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

ভারতের শীতকালীন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অঞ্চলভেদে ভিন্ন হয়। উত্তর-পশ্চিম ভারতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। হিমালয়ের উত্তর-পশ্চিম ঢালে তুষারপাতের পরিমাণও বেশি। পূর্ব উপকূলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সবচেয়ে কম।

শীতকালীন বৃষ্টিপাত ভারতের অর্থনীতি ও পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই বৃষ্টিপাতের ফলে ভারতের কৃষি, শিল্প, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন এবং পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় থাকে।

শীতকালীন ফসলের তালিকা

শীতকালীন ফসল হল এমন ফসল যা শীতকালে জন্মায় এবং উৎপন্ন হয়। শীতকালীন ফসলের মধ্যে রয়েছে:

শীতকালে পাওয়া যায় যেসব শাকসবজি:

    * ফুলকপি

    * বাঁধাকপি

    * ওলকপি

    * লালশাক

    * পালংশাক

    * মুলা

    * শালগম

    * শিম

    * টমেটো

    * পেঁয়াজ পাতা

    * লউ

    * ব্রোকলি

    * মটরশুঁটি

    * গাজর

    * ধনিয়াপাতা

শীতকালে পাওয়া যায় এমন কিছু ফল:

    * আঙুর

    * কমলা

    * আপেল

    * নাশপাতি

    * কলা

    * লেবু

    * পেঁপে

    * আম

    * জাম

শীতকালীন সমস্ত শস্য:

    * গম

    * যব

    * ভুট্টা

    * বাজরা

শীতকালীন ফসলগুলি সাধারণত শীতকালের শীতল তাপমাত্রা এবং কম আলোর পরিস্থিতিতে ভালভাবে বৃদ্ধি পায়। এই ফসলগুলি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর, এবং এগুলি বিভিন্ন ধরণের খাবারে ব্যবহার করা যেতে পারে।

শীতকালে শিশির পড়ার কারণ গুলি কি কি

শীতকালে শিশির পড়ার প্রধান কারণগুলি হল:

তাপমাত্রা: শীতকালে তাপমাত্রা কম থাকে। বাতাস তার আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে এমন তাপমাত্রা হ্রাস পায়। যখন তাপমাত্রা শিশিরের বিন্দুতে নেমে আসে, তখন বাতাস আর জলীয় বাষ্প ধরে রাখতে পারে না এবং তা শীতল বস্তুগুলিতে জমা হতে শুরু করে।

আর্দ্রতা: বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাতাসে বেশি আর্দ্রতা থাকলে শিশির পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

শান্ত বাতাস: শান্ত বাতাস শিশির পড়ার জন্য উপযুক্ত। বাতাস চলাচল করলে, এটি শিশিরকে বাতাসে ছড়িয়ে দিতে পারে।

শীতকালের সকাল: শীতকালে সকালের দিকে তাপমাত্রা কম থাকে। তাই শীতকালের সকালের দিকে শিশির পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

শিশির প্রকৃতির একটি সুন্দর প্রাকৃতিক ঘটনা। এটি প্রায়শই ঘাস, গাছপালা এবং অন্যান্য বস্তুর উপর দেখা যায়। শিশির গাছপালা এবং অন্যান্য উদ্ভিদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি উদ্ভিদকে জল সরবরাহ করে এবং তাদের বৃদ্ধি এবং বিকাশে সহায়তা করে।

শীতকালে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কত থাকে

বাংলাদেশে শীতকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সাধারণত ৪ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। তবে, দেশের উত্তরাঞ্চলে, যেমন ময়মনসিংহ, সিলেট, রংপুর এবং ঠাকুরগাঁও জেলায়, তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যেতে পারে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। সেখানে তাপমাত্রা ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল।

শীতকালে বাংলাদেশের শীতের অনুভূতি বাতাসের আদ্রতা এবং বাতাসের গতির উপর নির্ভর করে। যদি বাতাস আর্দ্র হয় এবং বাতাসের গতি কম হয়, তাহলে শীতের অনুভূতি বেশি হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url