আমরা দিপাবলীতে কেন বাজি ফাটাই । দীপাবলি সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য


আমরা দীপাবলি কেন পালন করি

দীপাবলি হিন্দুদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এটি হিন্দু পঞ্জিকায় কার্তিক মাসে অনুষ্ঠিত হয়, যা গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে পড়ে। অন্যান্য ভারতীয় অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও এটি উদযাপন করে থাকে। এটি আধ্যাত্মিক "অন্ধকারের ওপর আলোর বিজয়, মন্দের ওপর ভালোর, এবং অজ্ঞতার ওপর জ্ঞানের প্রতীক"। এই দিন সব হিন্দুর বাড়িতে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। তবে জৈন-শিখ ধর্মালম্বীরাও এই সময়ে একই ধরনের উৎসব পালন করে থাকেন। দীপাবলি ভারত, নেপাল, মরিশাস, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, গায়ানা, সুরিনাম, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ফিজিতে একটি সরকারি ছুটির দিন। বাংলাদেশেও এই দিনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি দেওয়া হয়।

দীপাবলির ধর্মীয় তাৎপর্য:

দীপাবলির সবচেয়ে জনপ্রিয় ধর্মীয় তাৎপর্য হল রামায়ণে বর্ণিত রাম, সীতা ও লক্ষ্মণের অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন। রাম রাবণকে বধ করে চৌদ্দ বছরের বনবাস শেষে স্ত্রী সীতা ও ভাই লক্ষ্মণকে নিয়ে অযোধ্যায় ফিরে আসেন। তাদের স্বাগত জানাতে অযোধ্যার মানুষরা ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বালায়। সেই থেকেই এই দিনটি দীপাবলি নামে পরিচিতি লাভ করে।

দীপাবলির আরেকটি ধর্মীয় তাৎপর্য হল লক্ষ্মীপূজা। লক্ষ্মী হলেন দেবী ঐশ্বর্য, সমৃদ্ধি ও সুখের। দীপাবলির দিন লক্ষ্মীকে পূজা করা হয়। এই দিন নতুন পোশাক পরা, নতুন জিনিসপত্র কেনা ও মিষ্টি খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।

দীপাবলির অন্যান্য তাৎপর্য:

দীপাবলির ধর্মীয় তাৎপর্যের পাশাপাশি এটি একটি সামাজিক উৎসবও। এই দিন পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে সময় কাটানো হয়। নতুন পোশাক পরা, নতুন জিনিসপত্র কেনা ও মিষ্টি খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। দীপাবলিতে আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানোরও প্রচলন রয়েছে।

দীপাবলির তাৎপর্য:

দীপাবলির বিভিন্ন তাৎপর্য রয়েছে। এটি একটি ধর্মীয় উৎসব, একটি সামাজিক উৎসব এবং একটি অর্থনৈতিক উৎসব। দীপাবলির মাধ্যমে হিন্দুরা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রকাশ ঘটায়। এই দিন তারা তাদের জীবনের সুখ-সমৃদ্ধি ও শান্তি কামনা করে। দীপাবলির মাধ্যমে তারা তাদের সামাজিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে। এবং দীপাবলির মাধ্যমে তারা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রসার ঘটায়।

আমরা দিপাবলীতে কেন বাজি ফাটাই

দিপাবলিতে বাজি ফাটানোর অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কারণ রয়েছে।

ধর্মীয় কারণ:

দিপাবলির একটি জনপ্রিয় ধর্মীয় তাৎপর্য হল রামায়ণে বর্ণিত রাম, সীতা ও লক্ষ্মণের অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন। রাম রাবণকে বধ করে চৌদ্দ বছরের বনবাস শেষে স্ত্রী সীতা ও ভাই লক্ষ্মণকে নিয়ে অযোধ্যায় ফিরে আসেন। তাদের স্বাগত জানাতে অযোধ্যার মানুষরা ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বালায়। সেই থেকেই এই দিনটি দীপাবলি নামে পরিচিতি লাভ করে।

আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানোকে আলোর উৎসবের একটি অংশ হিসেবে দেখা হয়। এটি আলোর বিজয় ও অন্ধকারের উপর জয়ের প্রতীক। এটি নতুন বছরের নতুন সূচনা ও সুখ-সমৃদ্ধির প্রতীকও।

সামাজিক কারণ:

দীপাবলি একটি সামাজিক উৎসব। এই দিন পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে সময় কাটানো হয়। আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানো একটি উপায় যেখানে তারা তাদের আনন্দ প্রকাশ করে।

আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানো একটি দর্শনীয় ঘটনাও। এটি দিপাবলিকে একটি আরও উজ্জ্বল ও আনন্দময় উৎসব করে তোলে।

সাংস্কৃতিক কারণ:

আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানো ভারতীয় সংস্কৃতির একটি অংশ। এটি একটি ঐতিহ্য যা শতাব্দী ধরে চলে আসছে।

আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানো দিপাবলিকে একটি আরও বর্ণময় ও আকর্ষণীয় উৎসব করে তোলে। এটি ভারতীয় সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

তবে, আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানোর কিছু নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এটি আগুনের ঝুঁকিও বাড়ায়। তাই, আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানোর সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

১) দীপাবলির দিন রঙ্গোলি বানানো হয় কেন?

দীপাবলির দিন রঙ্গোলি বানানোর অনেক কারণ রয়েছে। এটি একটি প্রাচীন ঐতিহ্য যা শতাব্দী ধরে পালিত হয়ে আসছে। রঙ্গোলি বাঙালি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি দীপাবলির উৎসবের সৌন্দর্য এবং আনন্দকে প্রকাশ করে।

রঙ্গোলি তৈরির কয়েকটি কারণ হল:

আলোকে স্বাগত জানানো: দীপাবলি আলোর উৎসব। রঙ্গোলি হল আলোর একটি প্রতীক। এটি নতুন বছরের সূচনাকে চিহ্নিত করে এবং ভালবাসা, সুখ এবং সমৃদ্ধির আশা প্রকাশ করে।

শক্তি এবং ঐশ্বরিকতার প্রতীক: রঙ্গোলি ঐশ্বরিক শক্তি এবং সমৃদ্ধির প্রতীক। এটি দেবতাদের স্বাগত জানায় এবং তাদের আশীর্বাদ লাভের জন্য প্রার্থনা করে।

[Image of দীপাবলির রঙ্গোলিতে দেবতাদের চিত্র]

সৌন্দর্য এবং আনন্দের প্রতীক: রঙ্গোলি সৌন্দর্য এবং আনন্দের প্রতীক। এটি বাড়ির চারপাশে একটি উৎসবের আমেজ তৈরি করে এবং অতিথিদের স্বাগত জানায়।

[Image of দীপাবলির রঙিন রঙ্গোলি]







রঙ্গোলি বিভিন্ন ধরনের উপকরণ দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে। সাধারণ উপকরণগুলির মধ্যে রয়েছে চালের গুঁড়া, ফুল, রঙিন গুঁড়া, চালের শস্য, এবং পাতা। রঙ্গোলি বিভিন্ন ধরণের জ্যামিতিক নকশায় তৈরি করা যেতে পারে, বা এটি দেবতাদের বা অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী প্রতীকগুলির চিত্রও হতে পারে।

দীপাবলির দিন রঙ্গোলি তৈরি করা একটি সময়োপযোগী এবং আনন্দদায়ক কাজ। এটি একটি প্রাচীন ঐতিহ্য যা শতাব্দী ধরে পালিত হয়ে আসছে। রঙ্গোলি দীপাবলির উৎসবের সৌন্দর্য এবং আনন্দকে প্রকাশ করে এবং এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

২) দীপাবলিতে কেন ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বালানো হয়?

দীপাবলি আলোর উৎসব। এই উৎসবের দিন ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বালানোর অনেক কারণ রয়েছে।

আলোকে স্বাগত জানানো: দীপাবলি অমাবস্যার রাতে পালিত হয়। তাই চারদিকে নিকষ অন্ধকার থাকে। এই অন্ধকার থেকে মুক্তি পেতে এবং নতুন বছরের সূচনাকে চিহ্নিত করতে ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বালানো হয়।

শক্তি এবং ঐশ্বরিকতার প্রতীক: প্রদীপ শক্তি এবং ঐশ্বরিকতার প্রতীক। এটি দেবতাদের স্বাগত জানায় এবং তাদের আশীর্বাদ লাভের জন্য প্রার্থনা করে।

সৌন্দর্য এবং আনন্দের প্রতীক: প্রদীপ সৌন্দর্য এবং আনন্দের প্রতীক। এটি বাড়ির চারপাশে একটি উৎসবের আমেজ তৈরি করে এবং অতিথিদের স্বাগত জানায়।

অশুভ শক্তিকে দূর করা: বিশ্বাস করা হয়, নিকষ অন্ধকারেই অশুভ আত্মা ও অশুভ শক্তি সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাই এই অশুভ শক্তিকে দুর্বল করতে ঘরের প্রতিটি কোনায় প্রদীপ জ্বালানো হয়ে থাকে।

দীপাবলির দিন ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বালানো একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

৩) দীপাবলিতে কেন ঘরে লক্ষ্মীপুজো করা হয়?

দীপাবলি আলোর উৎসব। এই উৎসবের দিন ঘরে ঘরে লক্ষ্মীপুজো করা হয়। লক্ষ্মী দেবী হলেন ধন, সম্পদ, সমৃদ্ধি এবং সৌভাগ্যের দেবী। তাই দীপাবলিতে লক্ষ্মীপুজো করে বাঙালিরা নতুন বছরের জন্য দেবীর আশীর্বাদ লাভের জন্য প্রার্থনা করে।

লক্ষ্মীপুজোর সময় দেবী লক্ষ্মীর মূর্তি বা ছবি স্থাপন করা হয়। দেবীকে বিভিন্ন ধরনের ফল, মিষ্টি, ফুল, এবং অন্যান্য উপহার দিয়ে পূজা করা হয়। পুজোর পর দেবীকে নতুন পোশাক পরিয়ে দেওয়া হয় এবং তাকে ঘরে সারা বছরের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।

লক্ষ্মীপুজোর দিন বাঙালিরা নতুন কাপড় পরে, নতুন জিনিসপত্র কেনে, এবং আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটায়। এই উৎসব বাঙালি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

লক্ষ্মীপুজোর কিছু ঐতিহ্যবাহী রীতিনীতি হল:

রঙ্গোলি তৈরি করা: দীপাবলির দিন বাড়ির প্রবেশদ্বারে রঙ্গোলি তৈরি করা হয়। রঙ্গোলি হল আলোর এবং সৌভাগ্যের প্রতীক।

প্রদীপ জ্বালানো: দীপাবলিতে ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বালানো হয়। প্রদীপ হল আলোর এবং ঐশ্বরিকতার প্রতীক।

মিষ্টি বিতরণ করা: দীপাবলিতে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। মিষ্টি হল সুখ এবং সমৃদ্ধির প্রতীক।

আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো: দীপাবলি একটি পারিবারিক উৎসব। এই দিন বাঙালিরা আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটায়।

৪) দীপাবলির সকালে তেল মেখে স্নান করা হয় কি?

হ্যাঁ, দীপাবলির সকালে তেল মেখে স্নান করা হয়। এটি একটি প্রাচীন ঐতিহ্য যা শতাব্দী ধরে পালিত হয়ে আসছে। দীপাবলি একটি নতুন বছরের উৎসব, তাই এই দিন তেল মেখে স্নান করা একটি শুভ কাজ বলে মনে করা হয়। এটি নতুন বছরের জন্য সুখ, সমৃদ্ধি এবং সৌভাগ্যের আশা প্রকাশ করে।

দীপাবলির সকালে তেল মেখে স্নান করার সময় সাধারণত সর্ষের তেল ব্যবহার করা হয়। সর্ষের তেল একটি পুষ্টিকর তেল যা শরীরের জন্য উপকারী। এটি ত্বক এবং চুলের জন্যও ভাল।

দীপাবলিতে তেল মেখে স্নান করার পর বাঙালিরা নতুন কাপড় পরে। তারা নতুন জিনিসপত্র কেনে এবং আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটায়।

দীপাবলির সকালে তেল মেখে স্নান করার কিছু উপকারিতা হল:
  • এটি ত্বক এবং চুলের জন্য ভাল।
  • এটি শরীরের জন্য পুষ্টিকর।
এটি নতুন বছরের জন্য সুখ, সমৃদ্ধি এবং সৌভাগ্যের আশা প্রকাশ করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url