সামান্য আঘাত ও রক্তপাতই ধারণ করতে পারে ভয়ঙ্কর আকার। তাই সাবধানতা জরুরি

 


এই পোষ্টের সমস্ত বিষয়বস্তু

সামান্য আঘাত ও রক্তপাতই ধারণ করতে পারে ভয়ঙ্কর আকার। তাই সাবধানতা জরুরি:

তাড়াহুড়োয় স্কুল যাওয়ার পথে সিঁড়ি দিয়ে পড়ে গিয়েছিল হৈমন্তী। হাত কেটে গিয়েছিল খানিক। তখন আমল না দিয়ে হাত ধুয়ে স্কুলে চলে যায় সে। পরে বাড়ি ফিরে অ্যান্টি-সেপটিক লিকুইড দিয়ে ভাল করে পরিষ্কার করেছিল বটে, কিন্তু ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে। রাত গড়াতে না গড়াতেই হাতের কাটা অংশ লাল হয়ে ফুলে যায়, তা পরিণত হয় গভীর ক্ষততে। সুস্থ হওয়ার জন্য শেষ পর্যন্ত তাঁকে নিতে হয় অ্যান্টি-বায়োটিক।

রোজকার জীবনে কাটা-ছড়া নতুন কিছু নয়। কখনও পড়ে গিয়ে, কখনও বা অন্য দুর্ঘটনায় কেটে বা ছড়ে যায়। কিন্তু তাকে তেমন ভাবে আমল দেওয়া হয় না। ফলে অনেক সময়েই সেই কাটা পরিণত হতে পারে ক্ষততে। তা থেকে গ্যাংগ্রিন, এমনকি অঙ্গাংশ বাদ দেওয়ার মতো বড় ক্ষতি হওয়ার ভয়ও অমূলক নয়। তা হলে কাটা-ছড়ার ক্ষেত্রে কতটা গুরুত্ব দেবেন? কী কী কথা মাথায় রাখবেন?

আঘাতের ধরন:

আঘাতেরও ধরন রয়েছে। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরুণাংশু তালুকদার বলছেন, ‘‘আঘাতকে ভাগ করা যায় দু’ভাবে— অ্যাক্সিডেন্টাল বা দুর্ঘটনাবশত এবং ইনটেনশনাল বা ইচ্ছাকৃত। ইনটেনশনাল আঘাতের মধ্যে পড়ে যে কোনও রকম ল্যাপ্রোস্কোপিক অপারেশন। অ্যাপেন্ডিসাইটিস, গল ব্লাডার জাতীয় অপারেশন করতে গেলে ছোট ছোট ফুটো করা হয়। সেলাই থেকেও ক্ষত তৈরি হতে পারে।’’ প্রথমে দেখতে হবে ক্ষতর ধরন।

প্রাথমিক চিন্তা:

আঘাতের ধরন ছাড়াও তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে আরও কিছু বিষয়।

ঘটনার স্থান: প্রথমে দেখতে হবে, কেটে-ছড়ে যাওয়ার ঘটনা কোথায় ঘটেছে? রাস্তায় ধুলো-বালির মাঝে না কি বাড়িতে পরিষ্কার জায়গায়?

কাটার অংশ: কেটেছে কোথায়? অর্থাৎ শরীরের কোন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে? মুখ, গাল বা নরম কোনও জায়গায় না কি হাতের তালু কিংবা পায়ের তলায়? দেখতে হবে তা-ও।

কতটা গভীর: কাটা সামান্য না কি বেশ গভীর পর্যন্ত গড়িয়েছে? বিচার্য সেটিও। গভীর কাটা চামড়া, মাংস, ফ্যাট ভেদ করে হাড় অবধি পৌঁছেছে কি না, জানা দরকার।

কার ক্ষত: প্রতিটি ক্ষতই গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। কিন্তু কোন বয়সের মানুষের ক্ষত বা তার কোনও শারীরিক রোগের ইতিহাস আছে কি না— সেটা গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে গুরুত্ব আলাদা। যাঁদের ডায়াবিটিস, এইচআইভি, কিডনি ফেলিয়োর বা রক্তে সমস্যা আছে, তাঁদের চিকিৎসা হবে অন্য রকম। বয়স বেড়ে গেলেও ক্ষতর চিকিৎসা হবে আলাদা। প্রবীণদের সমস্ত ধরনের ওষুধ দেওয়া সম্ভব নয়।

কাটার পরে:

ঠান্ডা জলে ভাল করে সেই ক্ষত পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। সুযোগ থাকলে ঈষদুষ্ণ জলে অ্যান্টি-সেপটিক লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। রাস্তায় কেটে গেলে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সে ক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সাবানজল বা অ্যান্টি-সেপটিক লিকুইড ব্যবহার করা আবশ্যিক। ধোয়ার পরে দেখতে হবে, ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে কি না। রক্ত বেরোতে থাকলে কাটা জায়গাটা হাত দিয়ে চেপে ধরতে হবে। সাধারণত দু’-চার মিনিটের মধ্যেই রক্ত বেরোনো কমে যায়। কিন্তু রক্ত বন্ধ না হলে চিকিৎসকের কাছে, হাসপাতালে যাওয়া বাঞ্ছনীয়।

অনেক সময়েই মানুষ সাধারণ কাটায় গুরুত্ব দেন না। যেমন মাছ কাটতে গিয়ে কাঁটা ফুটে যাওয়া। প্রাথমিক ভাবে মনে হতেই পারে, রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু কাঁটার অংশ ভিতরে থেকে যেতে পারে। আবার বাঁশের চোঁচ ফুটলে অনেক সময়ে ব্যথা না করলে মনে হয় যে, সেরে গিয়েছে বা চোঁচ বেরিয়ে গিয়েছে। আদতে তা নয়। এমনও দেখা গিয়েছে যে, মাংস কিনতে গিয়ে মুরগির পালক ফুটেছিল কারও। তা বেরিয়েও গিয়েছিল। কিন্তু সেই আঘাতে আমল না দেওয়ায় পরে তা-ই পরিণত হয়েছে ইনফেকশনে। কাঁকর, কাঁটা, চোঁচ জাতীয় ‘ফরেন বডি’ই পরে ভয়ঙ্কর হয়ে দাঁড়ায়। আবার অনেকেরই কড়া পড়ে যাওয়া বা কর্নের সমস্যা থাকে। কর্ন ক্যাপ ব্যবহার করার পরে চামড়া নরম হয়ে গেলে হাত দিয়ে খুঁটে তুলে ফেলে ক্ষত সৃষ্টি করেন অনেকে। তা থেকেও হতে পারে ইনফেকশন।

টিটেনাস ও তার ভ্রান্ত ধারণা:

লোহায় কেটে গেলেই যে টিটেনাস নিতে হবে— এই ধারণা রয়েছে অনেকের। জন্মের পরেই সাধারণত তিনটি টিটেনাসের কোর্স নেওয়া হয়। এর পরে প্রাথমিক ভাবে দশ বছর অন্তর ও পরে পাঁচ বছর অন্তর টিটেনাস নেওয়ার দরকার পড়ে। ডা. তালুকদার বলছেন, ‘‘২০১৯-এ কেউ টিটেনাস নিয়ে থাকলে ২০২৩ পর্যন্ত টিটেনাস না নিলেও চলে। ওই সময়ের মধ্যে কেটে গেলেও টিটেনাস নেওয়ার কোনও যৌক্তিকতা নেই।’’ তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা অ্যান্টি টিটেনাস সেরাম দিয়ে থাকেন। সেটা চিকিৎসকের বিচার্য।

বাজারচলতি ওষুধ:

কেটে গেলে মারকিউরোক্রোম বা বাজারচলতি অ্যান্টি-সেপটিক ক্রিম লাগান অনেকে। কিন্তু সব অ্যান্টি-সেপটিক ক্রিমই সমান কাজ করে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তবে মারকিউরোক্রোম বা বিটাডাইনের মতো ওষুধে থাকে কম মানের অ্যান্টি-সেপটিক কোশেন্ট। অনেকেরই মারকিউরোক্রোমে অ্যালার্জি থাকে। সে ক্ষেত্রে ওই ওষুধ ব্যবহার না করাই ভাল। আবার ছোট কাটা হলে ব্যান্ড-এড লাগানো যেতে পারে। খেয়াল রাখা জরুরি, ব্যান্ড-এডের আঠালো অংশ যেন ক্ষতর উপর দিয়ে না যায়। তা থেকেও হতে পারে ইনফেকশন।

আরো পড়ুন:

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url